সেহরি ও ইফতারের দোয়া-রোজার নিয়ত

সেহরি ও ইফতারের দোয়া-রোজার নিয়ত, সেহরি খাওয়ার দোয়া

প্রিয় মুসলমান ভাই ও বোনেরা আপনাদের প্রিয় মাস রমজানুল মোবারক চলে এসেছে তাই আপনাকে অগ্রিম রমজান মোবারকের শুভেচ্ছা। হিজরী ক্যালেন্ডার অনুযায়ী সবথেকে উত্তম মাস হচ্ছে রমজান মাস। মুসলমানদের সর্বোত্তম মাস হল রমজান মাস এই রমজান মাসে মুসলমান ব্যক্তিরা সিয়াম সাধনা করে এবং আল্লাহর পথে অনুসারী হয়। তারা এই মাসের নিজের গুনার বোঝা গুলো হাল্কা করার জন্য পরিশ্রম করে। রমজান মাসে মুসলমানদের পবিত্র গ্রন্থ আল কুরআন নাযিল করেছেন। রমজান মাস উপলক্ষে আল্লাহতালা সকল মুসলমানদের ত্রিশটি রোজা ফরজ হিসেবে পালন করার আদেশ দিয়েছেন তাই সকল ধর্মপ্রাণ মানুষ রমজান মাসে তারা প্রাণপণ চেষ্টা করেন রোযা রাখার জন্য।

যেহেতু আল্লাহতালা আমাদের জন্য অর্থাৎ মুসলমানদের জন্য ত্রিশটি রোজা ফরজ করেছেন তাই অবশ্যই আমাদের ত্রিশটি রোজা রাখতে হবে। তবে ত্রিশটি রোজা রাখতে হলে অবশ্যই আমাদের কিছু নিয়মকানুন অনুসরণ করতে হবে যে এই নিয়মগুলো অনুসরণ না করলে আমাদের রোজা ফরজ হবেনা তাই আমাদের বিশেষ কিছু নিয়ম অনুসরণের মাধ্যমে 30 টি রোজা অর্থাৎ সিয়াম সাধনা পালন করতে হবে। মনে রাখতে হবে রোজা মানে বিরত থাকা, শুধু না খেয়ে থাকা নয়। রোজা মানে ত্যাগ স্বীকার করা। তাই সকল মুসলমান ভাই ও বোনেরা সেহরি খাওয়ার সারাদিন সকল ধরনের পাপ কাজ থেকে দূরে থেকে নিজেকে খাদ্য থেকে দূরে রাখার নামই রোজা। তবে রোযা রাখার কিছু নিয়ম রয়েছে এই নিয়মগুলো আমরা আপনাদের সামনে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করব।

রোজা রাখার নিয়ম

আল্লাহতালা আমাদের জন্য অর্থাৎ মুসলমানদের জন্য ত্রিশটি রোজা ফরজ করেছেন। তাই আমাদের সারাদিন রোজা রাখতে হলে না খেয়ে থাকলেই হবে না কিছু নিয়মকানুন অনুসরণের মাধ্যমেই ত্রিশটি রোজা পালন করতে হবে। আপনাদের কথা চিন্তা করেই আমরা আমাদের নিবন্ধটিতে রোজা রাখার নিয়ম গুলো সুন্দর ভাবে উল্লেখ করলাম।

>
  • রোজা মানে বিরত থাকা।
  • সেহরি খাওয়ার পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত সারাদিন আমাদের না খেয়ে থাকতে হবে।
  • সেহরি খাওয়ার সময় আমাদের নিয়ত করেছি সেহেরী খেতে হবে এবং সেহরি খাওয়ার দোয়া পড়ে সেহেরী খেতে হবে।
  • সারাদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে হবে।
  • নিজেকে পাক পবিত্র রাখতে হবে।
  • সারাদিনে মিথ্যা কথা বলা যাবে না।
  • রোজা রেখে মানুষের গীবত গাওয়া যাবে না।

এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের নিয়ম রয়েছে এই নিয়মগুলো আমরা আপনাদের সামনে উল্লেখ করলাম এরপরও অনেক নিয়ম আছে এ নিয়মগুলো আপনি আপনার এলাকার স্থানীয় কোন মৌলবী অথবা হুজুরের কাছ থেকে জেনে নিতে পারেন। আপনার এলাকার ইমাম সাহেব হুজুরের কাছ থেকে আপনি সকল তথ্য এবং বিস্তারিত শুনে তারপরে রোজার নিয়ম সম্পর্কে জানবেন। মনে রাখবেন শুধু রোজা রাখলেই হবে না রোজার নিয়মকানুন আপনাকে জানতে হবে এবং সেই অনুযায়ী রোজা রাখতে হবে।

রোজার রাখার নিয়ত

রোজার নিয়ত আরবি: নাওয়াইতু আন আছুম্মা গাদাম মিন শাহরি রমাজানাল মুবারাকি ফারদাল্লাকা, ইয়া আল্লাহু ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নিকা আনতাস সামিউল আলিম।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আজকের পবিত্র রমজানের তোমার পক্ষ থেকে নির্ধারিত ফরজ রোজা রাখার ইচ্ছা পোষণ (নিয়্যত) করলাম।  অতএব তুমি আমার পক্ষ থেকে (আমার রোযা তথা পানাহার থেকে বিরত থাকাকে) কবুল কর, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।

সেহরির পর এভাবেও রোজার নিয়ত করা যেতে পারে-
উচ্চারণ : বিসাওমি গাদিন নাওয়াইতু মিন শাহরি রামাদান।
অর্থ : আমি রমজান মাসের আগামীকালের রোজা রাখার নিয়ত করছি।

সেহরি খাওয়ার দোয়া

রমজান মাস আসলে মুসলমানদের যেন আনন্দ মুহূর্তকে মাস চলে আসে কারন তারা এই মাসে 30 টি রোজা রাখে এবং আল্লাহর প্রতি অনুগত হয়। আল্লাহতালা বলেছেন রমজান মাস মুসলমানদের জন্য প্রিয় মাস। রমজান মাস মুসলমানদের জন্য গুনহা মোছুনের মাস। তাই আমাকে সঠিকভাবে রোজা রাখতে হবে এবং সঠিক সময়ে চেহেরি খেয়ে রোজার নিয়ত করে, রোজা রাখতে হবে। তাই আমরা নিচে সুন্দরভাবে সেহেরী খাওয়ার দোয়া সম্পর্কে উল্লেখ করলাম যাতে আপনি খুব সহজেই সেহেরী দোয়া সম্পর্কে জানতে পারেন।

সেহরি খাওয়ার দোয়া

نَوَيْتُ اَنْ اُصُوْمَ غَدًا مِّنْ شَهْرِ رَمْضَانَ الْمُبَارَكِ فَرْضَا لَكَ يَا اللهُ فَتَقَبَّل مِنِّى اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْم

সেহরি খাওয়ার আরবি উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন আছুম্মা গাদাম মিন্ শাহরি রমাজানাল মুবারাকি ফারদাল্লাকা, ইয়া আল্লাহু ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নিকা আনতাস্ সামিউল আলিম।

সেহরি খাওয়ার বাংলা অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি আগামীকাল পবিত্র মাহে রমজানের নির্ধারিত ফরজ রোজা রাখার নিয়ত করলাম। অতএব তুমি আমার রোযা তথা পানাহার থেকে বিরত থাকাকে কবুল কর, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।

উপরে উল্লেখিত দোয়াটি আপনি যদি রোজা রাখার আগে অর্থাৎ সেহেরী খাওয়ার আগে দোয়াটি পড়ে তারপরে সেহরি খান তাহলে অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা আপনার সকল গুনাহ মাফ করে আপনার রোজা কবুল করবেন। এবং এই রোজার মাধ্যমে আপনাকে জান্নাত নসিব করতে পারেন। তাই অবশ্যই আপনাকে সেহেরী খাওয়ার আগে এই দোয়াটি সুন্দরভাবে পাঠ করতে হবে এবং তারপরেই চেহেরি গ্রহণ করতে হবে।

ইফতার খাওয়ার দোয়া

সারাদিন রোজা থেকে এবং সকল পানাহার থেকে বিরত থেকে আমরা সিয়াম সাধনা করি। সারাদিন অনাহারে থেকেই যদি আমাদের রোজাটা নষ্ট হয় তাহলে আমাদের অনেক কষ্ট লাগে। আল্লাহতালা বলেছেন যারা আমার জন্য সারাদিন রোজা রাখে এবং সকল পানাহার থেকে বিরত থাকে তাদেরকে জান্নাত নসিব করা হোক। তাই আমরা সঠিক নিয়মে সিয়াম সাধনা করব সেহরি খাওয়ার পর সারাদিন পাহাড় থেকে দূরে থেকে ইফতারের আগ মুহূর্তে আমাদের কিছু নিয়ম অনুসরণ করেই ইফতার করতে হবে। ইফতার করার আগ মুহূর্তে আমাদের নির্দিষ্ট কি দোয়া পড়তে হবে যে দোয়াটি পাঠ করলে অথবা যে দোয়াটি পড়লে আল্লাহতালা আমাদের সারাদিনের রোজাটি কবুল করবেন। অনেকেই রয়েছেন যারা ইফতারের দোয়া সম্পর্কে আমাদের সামনে যাতে চান তাদের জন্য এই দোয়াটি আমরা উপস্থাপন করলাম নিচে আপনি দেখে নিতে পারেন।

ইফতারের  দোয়া

بِسْمِ الله – اَللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَ عَلَى رِزْقِكَ وَ اَفْطَرْتُ

উচ্চারণ : ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা লাকা সুমতুওয়া আলা রিযক্বিকা আফত্বারতু।

অর্থ : ‘আল্লাহর নামে (শুরু করছি); হে আল্লাহ! আমি তোমারই জন্যে রোজা রেখেছি এবং তোমারই দেওয়া রিজিক দ্বারা ইফতার করছি।’ (আবু দাউদ, মিশকাত)

আমরা এই পোস্টটিতে চেষ্টা করেছি সম্পূর্ণ ইসলামিক শরীয়তে এবং কুরআন থেকে সকল তথ্য দেওয়ার। আপনি যদি মনে হয় এই পোষ্টের মাধ্যমে আমরা তাদের সাহায্য করতে পেরেছি এবং আপনাদের যদি বিন্দু পরিমান উপকার হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। এবং আমাদের তথ্যগুলো আপনি শেয়ার করবেন সকলকে দেখার সুযোগ করে দিবেন। এছাড়া হয়ত সেহরী এবং ইফতারের সম্পর্কটা আপনাদের কোন জানার আগ্রহ হয় অথবা কোন প্রশ্ন থেকে থাকে অবশ্যই সেটি কমেন্ট করে জানাবেন আমরা আপনাদের তথ্যগুলো সুন্দরভাবে উপস্থাপন করব এবং আপনার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব।

ইফতারের সময় করণীয়
১. সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করা।
২. ইফতারের সময় অন্য কাজে ব্যস্ত না হয়ে ইফতার করা।
৩. ইফতারের সময় বেশি বেশি দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা করা।
৪. খেজুর, সাদা পানি কিংবা দুধ দিয়ে ইফতার করে মাগরিবের নামাজ জামাতে পড়া।
৫. ইফতারে দেরি করে জামাত তরক না করা।
৬. ইফতারের সময় ভারী খাবার না খাওয়া। মাগরিবের নামাজ আদায় করে তৃপ্তিসহ পরিমাণ মতো খাবার খাওয়া। আর তাতে শরীর থাকে সুস্থ ও সবল। ইফতারের সময় অতিরিক্ত খাবার খেলে জামাআত ও ইবাদত থেকে বঞ্চিত হতে হয়।

বিশেষ করে

ইফতারের কিছু সময় আগে ইফতারি সামনে নিয়ে বসে বসে তাসবিহ-তাহলিল, তাওবাহ-ইসতেগফার, দোয়া-দরূদ পড়ার মাধ্যমে সময় অতিবাহিত করা। ইফতারের আগ মুহূর্ত থেকে ইফতার করার সময় আল্লাহ তাআলা বান্দার যে কোনো দোয়া কবুল করে নেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *